এস এম এ রউফ,কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি: খুলনার কয়রা উপজেলা, যা সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে কপোতাক্ষ, শাকবাড়িয়া এবং কয়রা নদীর ১৫৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ দিয়ে সুরক্ষিত, সেখানে দুর্বল বাঁধ এবং লোনাপানির আগ্রাসন এখন এক বড় সংকট। অপরিকল্পিত চিংড়ি ঘেরের কারণে দুর্বল হচ্ছে এই বেড়িবাঁধ। এতে বাড়ছে ভাঙনের ঝুঁকি, প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্লাবিত হচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা। মানুষ হারাচ্ছে বসতভিটা, উজাড় হচ্ছে বনজ ও ফলদ সম্পদ, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সকালে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মহারাজপুর ইউনিয়নের ১৩-১৪/২ পোল্ডারের হোগলা বাজার থেকে দশহালিয়া এলাকায় এক বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় বেড়িবাঁধ কেটে বা ছিদ্র করে বসানো ১১টি অবৈধ পাইপ অপসারণ করা হয়। এসব পাইপ দিয়ে অবৈধভাবে নদীর লোনাপানি চিংড়ি ঘেরে ঢোকানো হচ্ছিল, যা বাঁধের স্থায়িত্বের জন্য মারাত্মক হুমকি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিজেদের সুবিধার জন্য বছরের পর বছর ধরে এমন অবৈধ কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। এতে বাঁধের কাঠামো দুর্বল হয়ে যায়, যার ফলে সামান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগেই বাঁধ ভেঙে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
অভিযান পরিচালনায় নেতৃত্ব দেওয়া পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ সুলাইমান হোসেন বলেন, “বাঁধ কেটে পাইপ বসিয়ে লোনাপানি উত্তোলন সম্পূর্ণ অবৈধ। এটি শুধু বাঁধের ক্ষতি নয়, হাজারো মানুষের জীবনের জন্য হুমকি। আমরা বারবার ঘের মালিকদের সতর্ক করা সত্ত্বেও তারা কর্ণপাত করেননি।” তিনি আরও বলেন, যেসব ঘের মালিক অবৈধভাবে লোনাপানি তুলছেন, তাদের একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাঁধের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাউবো আরও কঠোর নজরদারি ও নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাবে। এই অভিযানটি প্রমাণ করে যে, স্থানীয় প্রশাসন ও পাউবো বাঁধ রক্ষায় কতটা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তবে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে স্থানীয় জনসাধারণের সচেতনতা ও সহযোগিতা অপরিহার্য। উপকূলের এই কান্না থামাতে দরকার সম্মিলিত উদ্যোগ, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত উপকূলে বসবাস করতে পারে।