এস এম এ রউফ কয়রা (খুলনা): খুলনা জেলার প্রত্যন্ত উপকূলীয় উপজেলা কয়রার মানুষের মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তীব্র চিকিৎসক সংকট, অবকাঠামোগত দুর্বলতা এবং প্রয়োজনীয় সেবার অভাবের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে কয়রা উপজেলা পরিষদের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এই মানববন্ধনে স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও বিশিষ্ট নাগরিকরা সংহতি প্রকাশ করেন। মানববন্ধন শেষে সাত দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল্লাহ আল বাকীর মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো হয়।
স্বাস্থ্যসেবা সংকটের চিত্র
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, খুলনা শহর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কয়রার প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ ন্যূনতম চিকিৎসার জন্য জেলা শহরে যেতে বাধ্য হন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিন বছর ধরে সিজারিয়ানসহ সব ধরনের অপারেশন বন্ধ রয়েছে। প্যাথলজি টেস্ট, আলট্রাসনোগ্রাফি ও এক্স-রে করার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে আর্থিক সংকটে থাকা অনেক রোগী বিনা চিকিৎসায় জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
বক্তারা আরও জানান, ৫০ শয্যার হাসপাতালটি বর্তমানে ১৯ শয্যার একটি ভবনে সীমাবদ্ধ। ৩১ শয্যার পুরনো ভবনটি পরিত্যক্ত এবং ২০২২ সালে বরাদ্দ হওয়া নতুন ভবনের কাজও স্থবির হয়ে আছে। সবচেয়ে বড় সংকট হলো চিকিৎসকের অভাব। হাসপাতালে কোনো নারী চিকিৎসক নেই। গাইনী, সার্জারি, মেডিসিন বিশেষজ্ঞসহ কোনো জুনিয়র কনসালটেন্ট পদেও কোনো চিকিৎসক নেই। অনেক সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদায়ন হলেও তারা আবাসিক সমস্যার অজুহাতে কর্মস্থলে থাকেন না, অথবা খুলনা থেকে এসে দায়সারা সেবা দিয়ে চলে যান। এতে প্রসূতি মা ও শিশুদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।
সাত দফা দাবি
বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক তরিকুল ইসলাম তার বক্তব্যে স্বাস্থ্যসেবা সংকট নিরসনে সাত দফা দাবি তুলে ধরেন:
১. কয়রা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারিয়ানসহ অন্যান্য অপারেশন কার্যক্রম পুনরায় চালু করা।
২. হাসপাতালে প্যাথলজি টেস্ট, আলট্রাসনোগ্রাফি ও এক্স-রে সেবার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
৩. গাইনী, মেডিসিন ও সার্জারি বিশেষজ্ঞসহ পর্যাপ্ত চিকিৎসক এবং জনবল পদায়ন করা।
৪. চিকিৎসকদের কর্মস্থলে অবস্থান নিশ্চিত করতে আধুনিক আবাসিক ভবন ও উন্নত কর্মপরিবেশ তৈরি করা।
৫. ৩১ শয্যার নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সেবা চালু করা।
৬. কয়রা উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র সংস্কার করে চিকিৎসক পদায়ন করা।
৭. কয়রা সদরে ৫০ শয্যার একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ করা।
সভাপতির বক্তব্যে সাংবাদিক তরিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা শুধু আশ্বাস নয়, এই দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করি।”
মানববন্ধনে বক্তাদের মধ্যে ছিলেন কয়রা সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এইচএম শাহাবুদ্দিন, কয়রা প্রেসক্লাবের সভাপতি মাস্টার সদউদ্দিন আহমেদ, মানবাধিকার ব্যুরোর নির্বাহী সদস্য প্রভাষক নুরুজ্জামান এবং ডেলিভারির সময় মৃত এক নারীর ভাই রাসেল। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কয়রাবাসীর এই ন্যায্য দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতে দীর্ঘদিনের বঞ্চনার অবসান হবে বলে আশা করা যায়।