শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০০ অপরাহ্ন
নোটিশ
যে সব জেলা, উপজেলায় প্রতিনিধি নেই সেখানে প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। বায়োডাটা সহ নিউজ পাঠান। Email: newssonarbangla@gmail.com

আসাদের পতন: সিরিয়ায় কী হবে? মধ্যপ্রাচ্যে আসবে ক্ষমতার ভারসাম্য?

এনএসবি ডেস্ক:
Update : রবিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭:৩৮ অপরাহ্ন

এন এস বি ডেস্ক:   মাত্র এক সপ্তাহ আগেও বাশার আল-আসাদের পতন প্রায় কল্পনাতীত ছিল। যখন বিদ্রোহীরা সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমে ইদলিবে তাদের ঘাঁটি থেকে বের হয়ে এলো এবং আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে এক বিস্ময়কর অভিযান শুরু করলো। এখন সিরিয়া একজন স্বৈরাচারের শাসন থেকে মুক্তই শুধু নয়, আসাদের পতনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাবে মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতার হিসাবনিকাশ।আসাদের দুই যুগের শাসনের অবসান সিরিয়ার ইতিহাসে একটি টার্নিং পয়েন্ট। নতুন যুগের সূচনা; যা এসেছে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের হাত ধরে।আসাদ তার বাবা হাফেজ আল আসাদের মৃত্যুর পর ২০০০ সালে ক্ষমতায় বসেন। তার বাবাও ২৯ বছর ধরে সিরিয়া শাসন করেছেন। তিনিও অনেকটা তার ছেলে বাশার আল আসাদের মতোই। দমনপীড়ন চালিয়ে জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে ছিলেন।আসাদ তার বাবার মৃত্যুর পর কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত এবং দমনমূলক রাজনৈতিক কাঠামোর উত্তরাধিকারী হন, যেখানে বিরোধিতা সহ্য করা হতো না।প্রথমে মনে হয়েছিল, আসাদ আলাদা হবেন। তার বাবার চেয়ে উদার, বর্বরতাহীন। কিন্তু অল্প সময় পরেই সেই ভুল ভাঙলো।

আসাদ চিরকাল এমন একজন শাসক হিসোবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন; যিনি ২০১১ সালে তার বিরুদ্ধে শুরু হওয়া শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকে সহিংসভাবে দমন করেন। যা পরে দেশটিকে গৃহযুদ্ধের দিকে চালিত করেছিল। প্রায় পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন, উদ্ধাস্তু হয়েছিলেন কয়েক লাখ।সে সময় রাশিয়া ও ইরানের সহায়তায় তিনি বিদ্রোহীদের দমন করে টিকে থাকেন। রাশিয়া তার শক্তিশালী বিমানশক্তি দিয়ে সহায়তা করেছে; অন্যদিকে ইরান সিরিয়ায় সামরিক উপদেষ্টা পাঠিয়েছে এবং হিজবুল্লাহ তাদের প্রশিক্ষিত যোদ্ধাদের মোতায়েন করেছে। 
কিন্তু এবার তা হয়নি। তার মিত্রদের অনেকেই যারা তাদের নিজস্ব বিষয় নিয়ে ব্যস্ত ছিল; তারা মূলত তাকে ত্যাগ করেছে। তাদের সাহায্য ছাড়া আসাদের সৈন্যরা বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়তে অক্ষম ছিল। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা বিদ্রোহীদের দমন করতেও চায়নি। ফলে সিরিয়ার ইসলামপন্থি গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) ক্রমেই সামনে এগিয়ে গেছে এবং আসাদকে উৎখাত করেই ছেড়েছে।

প্রথমত, বিদ্রোহীরা গত সপ্তাহে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পো দখল করে নেয়। এ সময় বলা যায় কোনো প্রতিরোধেই মুখেই তাদের পড়তে হয়নি। তারপর হামা, হোমস ও অন্যান্য শহর। এর মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আসাদের ক্ষমতার কেন্দ্রে প্রবেশ করে তারা। 
এখন বলা যায়, আসাদ পরিবারের পাঁচ দশকের স্বৈরশাসনের অবসান এই অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে সহায়তা করবে। 
যদিও ইরান আবার একটি ধাক্কা খেলো। আসাদের অধীনে সিরিয়া তার মিত্র ইরান ও হিজবুল্লাহর মধ্যে সংযোগের মাধ্যম ছিল এবং এই চ্যানেলেই অস্ত্র ও গোলাবারুদ আসতো।এদিকে ইসরাইলের সঙ্গে বছরব্যাপী যুদ্ধের পর হিজবুল্লাহ নিজেই দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং এর ভবিষ্যৎ প্রায় অনিশ্চিত।ইরান-সমর্থিত আরেকটি গোষ্ঠী ইয়েমেনের হুতি। তাদের ওপর বারবার বিমান হামলা চালানো হয়েছে। হুতি, ইরাকের মিলিশিয়া এবং গাজায় হামাস, যাকে তেহরান ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ হিসেবে দেখে; যা এখন গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো।সিরিয়ার এই পট পরিবর্তনে সম্ভবত সবচেয়ে লাভবান হবে ইসরাইল। কারণ তাদের কাছে ইরান বরাবরই একটি হুমকি ছিল।অনেকেই মনে করেন তুরস্কের আশীর্বাদ ছাড়া বিদ্রোহীদের এই আক্রমণ সফল হতো না। সিরিয়ার কিছু বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়েছে তুরস্ক, কিন্তু এবার এইচটিএস বিদ্রোহীরা, যারা আসাদকে হটিয়েছে, তারা তুরস্কের কোন সমর্থন পায়নি। 
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বেশ কয়েকবার সিরিয়ার শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের সুযোগ করে দিতে একটি কূটনৈতিক সমাধান খুঁজতে আলোচনার জন্য আসাদকে চাপ দিয়েছিলেন। 
কিন্তু সিরিয়ায় এখন কী হবে? বিদ্রোহী গ্রুপ এইচটিএস তো আল কায়েদা থেকে বের হয়ে আসা একটি গোষ্ঠী; যাদের ভয়ঙ্কর অতীত আছে। তারা গত বছরগুলোতে জাতীয়তাবাদী শক্তি হিসেবে আবির্ভুত হওয়ার চেষ্টা করেছে। তবে তাদের সাম্প্রতিক বার্তার মধ্যে একটি কূটনৈতিক এবং সমঝোতার সুর রয়েছে।কিন্তু অনেকেই মনে করেন, এখন তাদের ভিন্ন কোনো পরিকল্পনা থাকতে পারে।

একই সময়ে, সিরিয়ার নাটকীয় পট পরিবর্তন দেশটিকে একটি বিপজ্জনক শূন্যতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।  
সূত্র: বিবিসি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Theme Created By Uttoron Host