মোঃ রেজাউল হক নড়াইল থেকে ঃ বাঙালির উৎসব আর ঐতিহ্যের যেন শেষ নেই! হাজার বছর ধরে চলে আসা রীতি অথবা কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে জন্ম নেওয়া আচার এক সময় একটি উৎসবে পরিণত হয়। এসব উৎসবে সকলেই পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠে। এরকমই একটি আচার-অনুষ্ঠানের নাম জামাই ষষ্ঠী। জামাই ষষ্ঠী মূলত: বাংলা বাঙালির চিরায়ত লোকজ উৎসব। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই অনুষ্ঠান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আনন্দের। উৎসবের আমেজ তৈরি হয় জামাই ষষ্ঠীকে কেন্দ্র করে। বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিক লৌকিক আচার।
জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে এই আচার পালন করা হয়। এই মাস আবার বাঙালির ফলের রসনা তৃপ্তির মাস। বাজারে থাকে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু সহ আরও অনেক ধরনের দেশি ফল। জামাই যেমন এসব ফল আর দুধ নিয়ে শশুর বাড়িতে উপস্থিত হন জামাই ষষ্ঠী নিতে ঠিক সেভাবেই জামাইকে বরণ করতেও প্রস্তুত থাকে শশুড় বাড়িও। বাড়িতে জামাইয়ের আগমনের পর থেকে পুরো বাড়িতে যেন আনন্দের বন্যা বয়ে যায়।
মূলত জামাইকে বছরের এই দিনে শশুড়বাড়িতে ঘটা করে নিমন্ত্রণ করা ও এই উপলক্ষ্যে দেবী ষষ্ঠীর কাছে জামাই-মেয়ের জন্য প্রার্থনা করাই মূল উদ্দেশ্য।
এই দিনে বিবাহিত মেয়ে ও জামাইকে নিমন্ত্রণ করে আপ্যায়ন করা হয়। জামাইষষ্ঠী মূলত লোকায়ত প্রথা। ষষ্ঠীদেবীর পার্বণ থেকেই এই প্রথার উদ্ভব। প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের ষষ্ঠী তিথিতে প্রথম প্রহরে ষষ্ঠীদেবীর পুজোর আয়োজন করা হত। ষষ্ঠীদেবী মাতৃত্বের প্রতীক। তাঁর বাহন বিড়াল। তাই মেয়ের মুখ দেখতে এবং মেয়ের দ্রুত সন্তান লাভের কামনায় মেয়ে জামাই আদরের পরিকল্পনা করা হলে জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লা তিথিতে পালিত হয়ে আসছে জামাইষষ্ঠী উৎসব।
জামাইষষ্ঠীর দিন জামাইয়ের হাতে হলুদ মাখানো সুতো বেঁধে দেওয়া হয় মা ষষ্ঠীর আর্শীবাদ রূপে। এরপর দীর্ঘায়ু কামনায় তেল-হলুদের ফোঁটা কপালে দিয়ে তালপাতার পাখা দিয়ে বাতাস করা হয়। ধান-দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করা হয়। এরপর পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দঘন পরিবেশে জামাইসহ সকলকে রসনায় তৃপ্ত করা হয়।