মোঃ শাহানুর আলম, স্টাফ রিপোর্টার: দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতির সাথে সমন্বয় রেখে দাম না বাড়ালে আখের অভাবে কালীগঞ্জের মোবারকগঞ্জ সুগারমিল অস্বিত্ব সংকটে পড়ে যাচ্ছে। প্রান্তিক কৃষকরা আখ চাষ বৃদ্ধি না করলে ঐতিহ্যবাহী এই মিলটি টিকে থাকা দুষ্কর হয়ে পড়বে।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নলডাঙ্গায় ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী মোবারকগঞ্জ সুগার মিলস লিঃ লোকসান আর ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দীর্ঘদিন চলে আসছে। সার্বিক খরচ নির্বাহ করে প্রতি কেজি চিনি উৎপাদনে মোট ব্যয় হয় ১৮৫ টাকা সেখানে সরকারী ভাবে বিক্রয় মূল্য ১০০টাকা। চাষিরা আখের মূল্য পান মন প্রতি ১৮০টাকা। উৎপাদন খরচ মিটিয়ে যা থাকে তা খুবই নগন্য, এই মূল্য যদি ২৫০টাকার উপরে হয় তাহলে কৃষকরা আগেরমত আখ উৎপাদন করবে এবং মিলটি লোকসান কাটিয়ে লাভের মুখ দেখতে পারবে বলে মনে করেণ সংশ্লিষ্টরা।
গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৬৫ হাজার মে.টন আখ মাড়ায়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সেখানে মাত্র ৩৬ হাজার মে.টন আখ মাড়ায় হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে এর লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে ৫৫হাজার মেট্্িরক টন। গত অর্থ বছরে মিলটিতে ক্ষতির পরিমান ছিল ঋণের সুদ বাদে ২৬ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা এবং ঋণের সুদ পরিশোধ করেছে ৪২ কোটি ৩৯ লক্ষ। সব মিলে অর্থ বছরে ক্ষতির পরিমান দাড়ায় ৬৮ কোটি ৫১লক্ষ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক ( অর্থ) মোঃ জাহিদুল ইসলাম বলেন, আখের উৎপাদন এবং মূল্য বাড়লে এই ক্ষতি অনেকটা কাটিয়ে উঠা যাবে। তিনি আরও বলেন গত অর্থ বছরে ৬০হাজার মেট্রিক টন আখ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলে সেখানে মাত্র ৩৫হাজার ৩’শ ৬০মে.টন আখ উৎপাদন হয়েছে। এবছর ৩হাজার ১একর জমিতে আখ চাষ হয়েছে যাতে এবছরেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। সরকারী ভাবে কৃষকদের আর্থিক প্রনোদনা দিলে এবং আখের দাম বৃদ্ধি করলে এবং কৃষকরা আখ চাষ বাড়িয়ে দিলে এই ক্ষতি আস্তে আস্তে কমে আসতে পারে।
বর্তমান প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মকর্তা, স্থায়ী শ্রমিক ও কর্মচারী রয়েছে ৩৬৪ জন, তাছাড়া মৌসুমী শ্রমিক ৩৪১জন এবং ৪৪জন চুক্তি ভিত্তিক খন্ডকালিন শ্রমিক রয়েছে। কর্মকর্তা ও শ্রমিক কর্মচারীদের মাসিক বেতন দিতে হয় ১কোটি ৪৩লক্ষ থেকে ১কোটি ৬০লাখ টাকা। এই খরচ নির্বাহ করে প্রতিষ্ঠানটি টিকিয়ে রাখতে গেলে আখের উৎপাদন বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই।
বর্তমানে কৃষকরা ঈ-৩৭, ঈ-৩৪, ঈ-১৬ ও ২৬ এবং বিএসআরআই-(ইঝজও-অঐক)-৪৬, ৪৫ জাতের আখ বেশি উৎপাদন হয় বলে মিলটির উৎপাদন ও বিপণন বিভাগ জানিয়েছেন।
মিলের অব্যাহত লোকসান প্রসংগে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, সরকারী ভাবে দাম বৃদ্ধি করলে কৃষকরা আখ চাষে উদ্বুদ্ধ হবে তখন বেশি বেশি আখ পাওয়া যাবে ফলে উৎপাদন খরচ কম হবে এবং লোকসান আস্তে আস্তে কমে আসবে। তাছাড়াও লোকসান কমাতে হলে সরকারকে আখ চাষে ভর্তুকি এবং আখের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানাবিধ সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে। মূলত: আখের উৎপাদন বাড়লে চিনি উৎপাদন ব্যয় কমে যাবে এবং প্রতিষ্ঠানের লোকসান কাটিয়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত হবে। এই প্রতিষ্ঠানের অনেক জমি হাতছাড়া হয়ে গেছে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতার দখলে চলে গেছে মোবারকগঞ্জ চিনি কলের তেলপাম্পসহ বেশকিছু সম্পত্তি। এগুলোর সঠিক তদন্ত করে দখলমুক্ত করার দাবি জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয় কৃষক, কর্মচারী এবং শ্রমিকরা জানান, দেশেরে দক্ষিন-পশ্চিম অঞ্চলের এই বৃহৎ চিনি শিল্পের উপর ৪/৫ লক্ষ মানুষের রুটি রুজি নির্ভর করে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।