এন এস বি ডেস্ক: সৌদি আরব জ্বালানি তেলের ওপর আর ভরসা রাখতে পারছে না । আর তাইতো ২০৩০ সালকে লক্ষ্য নির্ধারণ করে নিজেদের অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণের দিকে নজর দিয়েছেন যুবরাজ মুহম্মদ বিন সালমান। প্রশ্ন হচ্ছে এই পদক্ষেপ কী কেবলই অর্থনৈতিক নাকি এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক কোনো উচ্চাভিলাষ? অর্থনীতি এবং রাজনীতি একে অন্যের পরিপূরক। এই কথা মাথায় রেখেই ভিন্ন পথে হাঁটছে সৌদি আরব। স্বর্ণ আর জ্বালানি তেল কেন্দ্রিক সৌদি আরব বুঝতে পারছে এই খনিজ সম্পদ ফুরিয়ে গেলে ফিরে যেতে হবে ১৯৩০ সালের সেই সময়ে, যখন সৌদি মানে ছিল মরুভূমি আর বেদুইনের জীবন।কে জানতো মরুভূমির এই তপ্ত বালুর নিচে বেদুইনের এই ভবঘুরে জীবনের অপর পাতায় লেখা আছে অনাবিষ্কৃত আভিজাত্যের কল্পকথা। ১৯৩০ সালে একের পর এক তেলের খনি আবিষ্কার বদলে দেয় সৌদি অর্থনীতি। নিজেদের জ্বালানিকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বের শক্তিধর দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কাছে টানতে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যেরে এই দেশটি। একদিকে পেট্রোলিয়াম আরেক দিকে ডলার, সব মিলিয়ে সৌদি অর্থনীতির জয়জয়কার।ক্ষমতার আসনে বসার পর সৌদি যুবরাজ মুহম্মদ বিন সালমান বুঝতে পারেন জ্বালানি এবং স্বর্ণের ওপর নির্ভর করে টিকে থাকা প্রায় একশ’ বছরের এই আভিজাত্যের সূর্য ধীরে ধীরে পশ্চিম আকাশে ঝুলে পড়ছে, অস্তমিত হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। নিজেদের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে এবং সৌদি রাজতন্ত্রকে অটুট রাখতে নিজের দেশকে আলাদাভাবে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছেন সালমান। সালমানের নেয়া ভিশন ২০৩০ এমন এক সৌদির স্বপ্ন দেখাচ্ছে যেখানে নেই জ্বালানি তেলের আধিপত্য, সেই চকচকে স্বর্ণের বর্ণিলতা। এমন এক সৌদি যেখানে পর্যটন এবং খেলাধুলা থেকে আয় আসবে। অর্থনীতি তার বর্তমান কেন্দ্র থেকে নতুন কেন্দ্রের দিকে ধাবিত হবে- এমনই স্বপ্ন দেখছেন সালমান।শুধু অর্থনীতি না, রাজনীতির মাঠেও সৌদি আমেরিকার পিঠের ওপর পরগাছা হয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন থেকে বের হয়ে আসছে। হয়তো দূরদর্শী সালমান বুঝতে পারছেন ডলারের যেমনি দিন শেষ হয়ে আসছে, তেমনি ফুরিয়ে আসছে খনিতে থাকা জ্বালানি তেল। যে বন্ধুত্ব টিকে আছে পেট্রোডলারের ওপরে সেই বন্ধুত্বের আয়ু যে একেবারে শেষের দিকে তা বুঝতে সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যাকাণ্ড এবং সেটি কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের ভোল পাল্টানো চোখ খুলে দিয়েছে সালমানের।
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু ইস্যুতে বিশ্ব এমন এক যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে যেখানে জ্বালানি তেলের ব্যবহার গিয়ে ঠেকবে একেবারে তলানিতে। এতে করে সারাবিশ্ব উপকৃত হলেও বিপদে পড়বে তেলনির্ভর দেশগুলো। এক্ষেত্রে আগেভাগেই নিজেদের প্রস্তুতি পর্ব সেরে নিচ্ছেন সালমান।লন্ডনের ফরেন পলিসি সেন্টারের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো অধ্যাপক সিমন মাবোন বলেন, এটিকে শুধু সৌদির অর্থনৈতিক পরিবর্তন বলা যাবে না, সৌদি এমন এক আর্থসামাজিক ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকছে যেখানে অর্থনীতির পাশাপাশি সামাজিক পরিবর্তনও দিন দিন দৃশ্যমান হচ্ছে। সৌদি যখন বাইরের পর্যটকদের আকৃষ্ট করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে, ঠিক একই সময় নিজেদের প্রতিক্রিয়াশীল মনোভাব থেকেও বের হয়ে আসতে হচ্ছে তাদের।২০১৯ সালে হজের বাইরে প্রথমবারের মতো ট্যুরিস্ট ভিসা দেয়া শুরু করে সৌদি আরব। আর এই পর্যটকদের কথা মাথায় রেখেই সৌদির বুকে এক স্বপ্নের শহর গড়ে তুলছেন সালমান। নিওম নামক শহরকে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঢেলে সাজাচ্ছেন তিনি। এক ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে নিওম শহরকে এমনভাবে সাজানো হচ্ছে, এরইমধ্যে বিশ্ব মিডিয়া বলছে, এটি হবে স্বপ্নের শহর। একদিকে মরুভূমি, অন্যদিকে সমুদ্র, সঙ্গে বেদুইনের জীবনের ছোঁয়া আর বিনাশ্রমে যাতে এসব হাসিল হয় তার জন্য যারপরনাই আধুনিক ব্যবস্থা।