রয়েল আহমেদ শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলছে দালালদের রাজত্ব। হাসপাতালে আসা রোগীদের নানান ভয় দেখিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাচ্ছে দালালচক্র। এ দালাল চক্রে সক্রিয় আছে নারী-পুরুষসহ অন্তত ২০/৩০জন। এদের উৎপাতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা।দালালদের কাছে অসহায় চিকিৎসকরাও।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী একাধিক রোগী জানায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগ ও বহি:র্বিভাগে প্রতিদিন অন্তত ১০ থেকে ১২টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টারের ২০থেকে ৩০জন দালালকে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। এর মধ্যে বোরকা পরা নারী দালালও রয়েছে। চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র লেখা শেষ করলেই রোগীদের কমদামে পরীক্ষা- নিরিক্ষা ও ভালো চিকিৎসক দেখানোর কথা বলে প্রলোভন দেয় তারা। এভাবে রোগী ভাগিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যায় ওই দালাল চক্র।
শনিবার (২৩মার্চ) সকাল ১০ টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের মূল গেইটে অন্তত ৮ থেকে ১০জন দালাল রোগী বা রোগীর স্বজন সেজে দাঁড়িয়ে আছে। দূর থেকে আসা রোগীরা প্রেসক্রিপসন হাতে নিয়ে বের হতে দেখে তাদের পিছু নেয় কয়েকজন, এরা সবাই নারী দালাল চক্র। তারা বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কে আগে রোগী ধরবে এ নিয়েও দালালদের নিজেদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটছে অহরহ।
বহি: বিভাগের ভিতরের দৃশ্য আরও ভয়াবহ। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, ডাক্তারের কক্ষ থেকে প্রেসক্রিপসন হাতে নিয়ে বের হচ্ছেন উমেদপুর ইউনিয়নের রয়েড়া গ্রামের সকিনা বেগম। তিনি ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালের বহি:বিভাগে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। তিনি বের হওয়ার সাথে সাথে চার পাঁচজন দালাল ঘিরে ধরে ব্যবস্থাপত্র টানাটানি করছে। খানিক পরে ওই নারী দালালরা আড়াল হয়ে গেছে।
সকিনা বেগম বলেন, কয়েকজন নারী আমার ছেলের প্রেসক্রিপসন ধরে টানাটানি করছিল, আমাকে বাহিরে শাহিদা নামে একটা হাসপাতালের নাম বলল, ওখানে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করাবে, চিকিৎসক কোন পরীক্ষা দেয়নি জানালে তারা প্রেসক্রিপসন ফেরত দিয়ে সরে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দালাল চক্রের মধ্যে রয়েছে,আলপনা,সাবিনা,কালাম,মিজান,রতন, মমতাজ,সজীব, রুবেল, এরা সাবাই শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চারপাশে গড়ে উঠা একাধিক হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রুগী নিয়ে যায়। হাসপাতালের সামনেই রয়েছে শাহিদা প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার , শৈলকুপা প্রাইভেট হাসপাতাল,শৈলকুপা শিশু হাসপাতাল, ডক্টরস ল্যাব , নূরজাহান প্রাইভেট হাসপাতাল,খোন্দকার প্রাইভেট হাসপাতাল, সন্দা ক্লিনিক, স্বপ্না ক্লিনিক ইত্যাদি।
হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক বলেন, আমরা দূর থেকে এ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিতে এসেছি। কিন্তু স্থানীয় দালাল চক্রের কাছে আমরা অসহায় জিম্মি। তারা আমাদের বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি দেখিয়ে বাহিরে রোগী নিয়ে যায়।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডঃ আব্দুল আল-মামুন বলেন, দালাল নির্মূলের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি। আমরা অনেককে চিনি না, তাদের নাম পরিচয় জানিনা, তবে দালাল চক্রদের নাম-পরিচয় সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন থেকেও ভ্রাম্যমান আদালতের পরিচালনা করা হয়েছে।