জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২। আইনটি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ ও সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর দীর্ঘ আলোচনা হয়।
সব রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে বিলটি পাস করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, এ আইনের মাধ্যমে দক্ষ, সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের মধ্য থেকেই সিইসি ও কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে বিলের সমালোচনা করে একে আইওয়াশ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা। আর সার্চ কমিটিতে সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি রাখার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিলটির সংশোধনী উত্থাপন করেন সংসদে। পরে তা কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়।
এদিন সকালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। সংসদে চলমান অধিবেশনে আইন পাসের আবেদন জানান আইনমন্ত্রী। এরপর স্পিকার এ দাবি ভোটাভুটিতে দিলে সর্বসম্মতিক্রমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিলের পক্ষে কণ্ঠভোটের সমর্থনে পাস হয় সাংবিধানিক সংস্থা নির্বাচন কমিশন পরিচালনায় নতুন এ আইনটি।
এর আগে সকালে সংসদে মন্ত্রী জানান, বিরোধীপক্ষের সর্বোচ্চ সংখ্যক সংশোধনী গ্রহণ করেই পাস হলো আইনটি। বলেন, এই যে জনমত যাচাই, জনমত যাচাই আজ ১০ বছর হয়ে গেছে, ব্যাপারটা হচ্ছে তাল গাছটা না পেলে অনেক অভিযোগ থাকে, ঠিক আছে। আমার কথাটা সেটা নয়, এই যে সার্চ কমিটির কথাটা, এই সার্চ কমিটির কথাটা তো ২০১২ সালের সেই কনসেপটের ফল। এটা তো আজকের কোনো নতুন কিছু না। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত দুই জন বিশিষ্ট নাগরিক যেটা ছিল ওখানে, যাদের একজন নারী হবেন, এই জিনিসটা গ্রহণ করা হয়েছে।
এর আগে, বিরোধিতা করে সংসদে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টি ও বিএনপির আইন প্রণেতারা। তারা বলেন, আইনটি পাসের চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিই বেশি গ্রহণযোগ্য।
বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, এখানে একটি কুটকৌশল অবলম্বন করছেন। মানুষ আজ স্পষ্টভাবে চিন্তা করছে ২০১৪ সালে বিনা ভোটে সংসদ গঠন হয়েছে। ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়েছে। মানুষ এখন চিন্তা করছে আগামী দিনের ভোট, দিনের আলোয় নতুন করে আরও কোনো নতুন করে কৌশলের মাধ্যমে করবেন কি না।
বিএনপির আরেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, এখন যে পরিস্থিতি তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আর কোনো নির্বাচন বাংলাদেশে সম্ভব নয়। তবে, এর বাইরেও মত দিয়েছেন অন্য সংসদ সদস্যরা।
আরেক সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু বলেন, যে বাছাই প্রক্রিয়া নিরপেক্ষ হবে, স্বচ্ছ হবে এবং কোনো রাজনৈতিক প্রভাবের অধীনে হবে না।
সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, কিছু লোক অহেতুক ফতোয়া দেয়, এই যে ‘সুজন’ তার নির্বাহী সম্পাদক আমার বন্ধু বদিউল আলম মজুমদার আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কিছু ফতোয়া দিয়েছেন। তারা তো নির্বাচন করেন না, তারা ফতোয়া দেওয়ার কে। আমরা বলবো যারা নির্বাচন করি, যারা স্টকহোল্ডার আছে, আমরা বলবো কীভাবে নির্বাচন হবে। কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করলে ভালো হবে।
জবাবে আইনমন্ত্রী সাফ জানিয়েছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পদ্ধতি আদালতের রায়ে বাতিল হয়েছে সেটি নিয়ে নতুন করে আলোচনার কিছু নেই। বরং বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকার করা, তাকে হত্যার দায় নেওয়া এমন সত্য মেনে নিতে হবে বিএনপিকে। বলেন, তারপরও তারা বলবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তারা দেশে আদালতের রায়ও মানেন না। সত্য তারা (বিএনপি) ইনডিমনিটির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করতে দেয়নি। সত্য, কি সত্য হচ্ছে যারা খুনি তারা তাদের পুনর্বাসিত করেছে। এসব সত্য মেনে জনগণের কাছে ক্ষমা চান তারপর আমরা ঐক্যমতে আসবো।
জাতীয় রাজনীতির মৌলিক বিষয়গুলোতে সব দলের একমতে পৌঁছানোর গুরুত্ব উঠে আসে নতুন আইন পাসের আলোচনায়।
সকাল ১১টা ৫২ মিনিটে খসড়া বিলটি পাসের জন্য সংসদে উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বিলটি বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তা অনুমোদন দেন।
এ সময় বিল নিয়ে নিজের বক্তব্যে আইনমন্ত্রী বলেন, তড়িঘড়ি করে নয় ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় দ্রুততার সঙ্গে বিলটি দ্রুততার সঙ্গে পাসের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কেবল। আইন অনুযায়ী দক্ষ, সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের মধ্য থেকেই সিইসি ও কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়া হবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া এবং না নেয়া প্রতিটি দলই আইন করার বিষয়ে মত দিয়েছে। বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী বলেন, আইনটি করার প্রক্রিয়া শুরু করার পর একে কেন্দ্র করে আন্দোলন ইস্যুর রসদ কিংবা মসলা পাচ্ছেন না কেউ কেউ।
আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের পরপরই বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি শুরু করেন স্পিকার। বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্যরা বিলের ওপর এসব প্রস্তাব করেন। এসময় বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বিলের সমালোচনা করে এটিকে আইওয়াশ বলে মন্তব্য করেন।
এরপর জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরাও এর সমালোচনা করে সার্চ কমিটিতে সংসদ সদস্যের প্রতিনিধিত্ব দাবি জানান। বিলটি নিয়ে জাতীয় সংসদে আলোচনা চলে।