নিউজ ডেস্ক: গত মাসে শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনী ভারতের কমপক্ষে ৬০ জন জেলেকে গ্রেপ্তার করে। এ নিয়ে তামিলনাড়ু রাজ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ১৯ শে ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট করে যাচ্ছেন ওই রাজ্যের জেলেরা। যদি সব জেলেকে ছেড়ে দেয়া না হয়, তাহলে তারা ব্যাপকভিত্তিতে ‘রেল রোখো’ আন্দোলন করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের কাছে চিঠি লিখেছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিন। এতে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনীর ভীতি প্রদর্শনের কৌশল থেকে সব জেলের নিরাপত্তা ও তাদের বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করতে। এর প্রেক্ষিতে ৫ই জানুয়ারি শ্রীলঙ্কার একটি আদালত ১৩ জন জেলেকে মুক্তি দিয়েছে। কিন্তু পক প্রণালীর দুইপাশে তামিল জেলেদের মধ্যকার অব্যাহত বিরোধ ভারত ও শ্রীলঙ্কার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে গুরুত্বর প্রভাব ফেলেছে।
ভারত বনাম চীন
শ্রীলঙ্কার উত্তরাঞ্চলে দুটি আগ্রহোদ্দীপক ঘটনার প্রেক্ষাপটে চলমান এই সঙ্কটকে দেখতে হবে। প্রথমত, উত্তেজনা শুরুর কয়েকদিন আগে শ্রীলঙ্কার মৎস্য বিষয়ক মন্ত্রী ডগলাস দেবানন্দ ১৩ই ডিসেম্বর সাক্ষাত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্টিন কে. কেলির সঙ্গে। শ্রীলঙ্কা এবং ভারতের মধ্যে জেলে নিয়ে এই বিরোধে তার সহায়তা চেয়েছেন তিনি। এই বিরোধকে শ্রীলঙ্কার একজন প্রথম সারির তামিল নেতা আন্তর্জাতিকীকরণ করার চেষ্টা করছেন। এতে দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। প্রকৃতপক্ষে শ্রীলঙ্কায় ভারতের প্রভাবের দীর্ঘ দিনের সমালোচক হলেন দেবানন্দ। তিনি বর্তমান রাজাপাকসে সরকারের সঙ্গে জোট গড়েছেন। ফলে এক্ষেত্রে তিনি প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসের সমর্থন পাচ্ছেন।
অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, শ্রীলঙ্কার তামিল সম্প্রদায়ের মধ্যে অনাকাঙ্খিতভাবে পৌঁছে গেছে চীন। এর প্রেক্ষিতে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিরোধ উসকে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশে তিন দিনের ঝটিকা সফর করেছেন চীনের রাষ্ট্রদূত কি ঝেনহোং। তার এই সফর শ্রীলঙ্কার তামিলদের প্রতি শক্তির কোমল সমর্থন ছাড়া আর কিছু নয়। ১৫ই ডিসেম্বর তিনি আইকনিক জাফনা পাবলিক লাইব্রেরি পরিদর্শন করেছেন। এ সময় সেখানে তিনি ল্যাপটপ এবং বই উপহার দিয়েছেন। তার সঙ্গে ছিলেন মৎস্য বিষয়ক মন্ত্রী। তিনি তাকে চীনা কোম্পানি নির্মিত একটি সামুদ্রিক শসা উৎপাদনের হ্যাচারিতে নিয়ে গিয়েছিলেন।
পরেরদিন খালি গায়ে একটি সাদা ধুতি পরে চীনা রাষ্ট্রদূত ঝেনহোং জাফনায় নাল্লুর কাদাস্বামী মন্দিরে প্রার্থনা করেন। পরবর্তীতে তিনি মান্নারে নিউ সিল্ক রোড ফুডস্টাফ কারখানায় স্টাডি ট্যুর করেন। চীনা দূতাবাসের টুইটার একাউন্ট অনুযায়ী, সেখান থেকে ওই এলাকার হাজার হাজার জেলে পরিবারের কাছে খাদ্য সরবরাহ দেয়া হয়। জেলেদের মধ্যে কোভিড সংক্রান্ত ত্রাণ সামগ্রী ও মাছ ধরার সামগ্রী বিতরণ শেষে তিনি ১৭ই ডিসেম্বর ভারতের মূল ভূখ- থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে পয়েন্ট পেদ্রো পরিদর্শন করেন।